RSS

Category Archives: সাধারণ বিভাগ

কুরবানীর ইতিহাস

কুরবানী : কুরবানী সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হচ্ছে, ‘‘নিশ্চয়ই (হে নবী!) আমি আপনাকে (নিয়ামত পূর্ণ) কাওসার দান করেছি, অতএব, আপনি আপনার ‘রব’ এর সন্তুষ্টির জন্যে সালাত কায়েম করুণ ও তাঁর নামে কুরবানী করুন’’(সুরা আল কাওসার-১০৮/১-২)। রাসূল (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করবে না সে যেন ঈদগাহের কাছেও না আসে’ (আহমদ ও ইবনে মাযাহ)। হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (স) বলেছেন, কুরবানীর দিনে মানবসন্তানের কোন নেক আমলই আল্লাহ তায়ালার নিকট তত প্রিয় নয়, যত প্রিয় কুরবানী করা। কুরবানীর পশুর শিং, পশম ও ক্ষুর কিয়ামতের দিন (মানুষের নেক আমলনামায়) এনে দেয়া হবে। কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা আনন্দচিত্তে কুরবানী করো’’ (তিরমিযী)।

কুরবানীর অর্থ : আমাদের সমাজে বাংলায় প্রচলিত কুরবানী শব্দের অর্থ হচ্ছে, নিকটবর্তী হওয়া বা সান্নিধ্য লাভ করা। আল কুরআনে সুরা আল মায়েদার ২৭ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে, ‘ইয ক্কাররাবা-ক্কুরবা-নান’ অর্থাৎ যখন তার দু‘জনে কুরবানী পেশ করলো বা পশু জবাই করলো, কিংবা জবাই করে ফেলে আসল। সুরা আল কাওসারে বলা হয়েছে, ‘ফাছাল্লি লিরাবিবকা ওয়ানহার’ অর্থাৎ অতএব, (হে নবী!) আপনার ‘রব’-এর স্মরণে সালাত আদায় করুণ ও তাঁর সন্তুষ্টির জন্যে কুরবানী করুণ’। এখানে ‘নাহার’ বলতে কুরবানী বোঝানো হয়েছে। আসলে ‘নাহার’ শব্দে আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, নহর, বিশেষ নিয়মে জবাই বা হত্যা করা কিংবা প্রিয় বস্তুকে জবাই বা ত্যাগ করা।

কুরবানীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : দুনিয়ায় মানব বসতির শুরুতেই কুরবানীর প্রচলন শুরু হয়েছে। পৃথিবীর প্রথম মানুষ আমাদের আদি পিতা ও নবী আদম (আ:) এর প্রথম সন্তান কাবিল ছিল আল্লাহ তায়ালা ও পিতা-মাতার অবাধ্য, নাস্তিক বা কাফের। কাবিলের ছোট ভাই, হযরত আদম (আ) এর দ্বিতীয় ছেলে হাবিল ছিল আল্লাহভক্ত ও মু‘মেন। সে সময় আল্লাহ তায়ালার হুকুমে জোড়া জোড়া সন্তান হতো। এক জন পুত্র ও এক জন কন্যা সন্তান। আল্লাহ তায়ালার বিধান মতো প্রথম জোড়ার পুত্রের সাথে দ্বিতীয় জোড়ার কন্যার বিয়ে বৈধ ছিল। কাবিল আল্লাহ তায়ালার বিধান মানতে রাজি ছিল না। সে চেয়ে ছিল তার জোড়ার সুন্দরী বোনকেই বিয়ে করবে। শেষ পর্যন্ত তাদের দু‘জনকে কুরবানী পেশ করার নির্দেশ দেয়া হলো। আর বলা হলো যার কুরবানী কবুল করা হবে সে-ই প্রথম জোড়ার সুন্দরী বড় বোন কে বিয়ে করবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা হচ্ছে, ‘(হে নবী!) আপনি এদের কাছে আদমের দুই সন্তানের গল্পটি যথাযথভাবে শুনিয়ে দিন; গল্পটি ছিলো, যখনই তারা দু‘জনে আল্লাহর নামে কুরবানী পেশ করলো, তখন তাদের মধ্যে একজনের (হাবিলের) কাছ থেকে কুরবানী কবুল করা হলো, আর একজনের (কাবিলের) কাছ থেকে কুরবানী কিছুতেই কবুল করা হলো না, (যার কুরবানী কবুল করা হয়নি) সে বললো আমি অবশ্যই তোমাকে (যার কুরবানী কবুল করা হলো তাকে) হত্যা করবো, সে বললো, আল্লাহ তায়ালাতো শুধু পরহেযগার লোকদের কাছ থেকেই কুরবানী কবুল করে থাকেন'(সুরা আল মায়েদা-৫/২৭)।

আল্লাহ তায়ালার আইন অমান্য করার জন্যেই পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম হত্যাকান্ড ঘটায় পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান আল্লাহর দ্বীনের শত্রু, ‘কাবিল’। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ব প্রথম আল্লাহর আইন, বিধান বা দ্বীন অমান্য করা আর মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটালো আল্লাহর দ্বীনের শত্রু কাফের ‘কাবিল’। এটাই হচ্ছে নাস্তিক, কাফের ও শয়তানের কাজ, যা আল-কুরআনের সুরা আল মায়েদাসহ আরো কয়েকটি সুরায় উল্লেখ আছে। পৃথিবীতে কুরবানীর ইতিহাস ও হত্যার ঘটনা এখান থেকেই শুরু হয়েছে।

আজকে মুসলিম সমাজে কুরবানীর যে প্রচলন তা মূলত: মুসলিম মিল্লাতের বা জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ) এর দেখানো পথ বা সুন্নাত। হযরত ইব্রাহীম (আ) এর শতবর্ষ বয়সের পর আল্লাহ তায়ালা তাঁকে যে সন্তান দান করেছিলেন, তিনি আল্লাহ তায়ালা কতৃক আদিষ্ট হয়ে তাঁর সে কলিজার টুকরা হযরত ইসমাইল (আ) এর কুরবানীর সূত্র ধরে আজও কুরবানী প্রচলিত আছে।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর কুরবানীর সূত্রপাত : মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ) নমরুদ ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের অত্যাচারে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে নিজ স্ত্রী হযরত সারাকে সাথে নিয়ে শাম দেশে (সিরিয়া) হিজরত করলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানকার বাদশা ছিল জালিম ও ভীষণ বদ মেজাজী। বাদশার লোকেরা হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও তাঁর সুন্দরী স্ত্রী হযরত সারার আগমনের সংবাদ বাদশার দরবারে পৌঁছে দিলে বাদশা তাদেরকে ধরে নিয়ে আসতে বলে। বাদশার লোকেরা হযরত ইব্রাহীম (আ) ও তাঁর স্ত্রী সারাকে বাদশার দরবারে হাজির করে। বাদশা হযরত ইব্রাহীম (আ- এর কাছে জানতে চায় তার সাথে স্ত্রী লোকটি কে? ইব্রাহীম (আ) চিন্তা করলেন, স্ত্রী বললে হয়তো বা তাঁকে মেরে ফেলতে পারে, তাই তিনি বলেন সে আমার দ্বীনি বোন। বাদশা হযরত ইব্রাহীম (আ) কে বন্দী করে, আর হযরত সারাকে বাদশার বদস্বভাব চরিতার্থ করার জন্যে রেখে দেয়। বাদশার কু-প্রস্তাবে হযরত সারা রাজি নাহলে বাদশা তাঁকে হত্যার হুমকী দেয়। অত:পর হযরত সারা দু‘রাকা‘আত সালাত আদায় করার অনুমতি চাইলে বাদশা তাঁকে সালাত আদায়ের ব্যবস্থা করতে দেয়। হযরত সারা সালাত শেষে আল্লাহ দরবারে ফরিয়াদ করেন যেন আল্লাহ তায়ালা তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেন। এরই মধ্যে বাদশা অত্যন্ত অসুস্থ্য ও দুর্বল হয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপ দেখে আর বাদশার মৃত্যুর জন্যে তার লোকেরা হযরত সারাকে দায়ী করবে ভেবে হযরত সারা বাদশার সুস্থতার জন্যে দোয়া করেন। একে একে তিন বার একই ঘটনা ঘটলে বাদশা হযরত সারার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। হযরত সারার সতীত্ব দেখে আর এক সতী নারী হযরত হাযেরাকে তাঁর দাসী হিসেবে সঙ্গে দিয়ে তাঁদেরকে বিদায় করে দেয়।

হযরত সারা ও হযরত ইব্রাহীম (আ) মুক্ত হয়ে সে দেশে বসবাস শুরু করেন। হযরত সারা তাঁর দাসী হযরত হাযেরাকে হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর সাথে বিয়ে দেন। কারণ হযরত সারার বয়স তখন ৯০ বছর আর হযরত ইব্রাহীম (আ) এর বয়স তখন ১০০ বছর। তাদের বিয়ের দীর্ঘ সময় পার হলেও তখনো হযরত সারা মা হতে পারেননি। তিনি ভাবলেন শেষ বয়সে যদি আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানী করে তাঁর স্বামী হযরত ইব্রাহীম (আ) কে কোন সন্তান দান করেন। এই হযরত হাযেরার গর্ভেই হযরত ইসমাইল (আ)-এর জন্ম হয়।

হযরত ইসমাইল (আ)-এর জন্মের পর হযরত ইব্রাহীম (আ) তাঁর স্ত্রী হযরত হাযেরার কলিজার টুকরা ছেলেকে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে কা‘বা ঘরের নিকটবর্তী সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে নির্জন স্থানে সামান্য কিছু খেজুর ও এক মসক পানিসহ রেখে আসেন। হযরত ইব্রাহীম (আ) যখন তাদেরকে এ অবস্থায় রেখে স্থান ত্যাগ করছিলেন, তখন হযরত হাযেরা প্রশ্ন করছিলেন, আপনি আমাদের এ নির্জন স্থানে রেখে চলে যাচ্ছেন? হযরত ইব্রাহীম (আ) ক্ষীণ কণ্ঠে জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ। আবারো হযরত হাযেরা প্রশ্ন করলেন, এটা কি আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশ? হযরত ইব্রাহীম (আ) আবারও জবাব দিয়েছিলেন, হ্যাঁ। হযরত হাযেরা আল্লাহ্ তায়ালার ওপর ভরসা করে তাঁর শিশু সন্তানকে নিয়ে সেখানেই অবস্থান করলেন।

সে সময় কা‘বা ঘরের তেমন কোন চিহ্ন ছিলো না। কা‘বা ঘরের ভিটিটি যমীন থেকে বেশ উঁচু ছিল। বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট বন্যায় চার পাশ ভেঙে গিয়েছিল। হযরত হাযেরা ও তাঁর সন্তানের খাদ্য ও পানীয় যখন শেষ হয়ে গেল হযরত হাযেরা তখন খাদ্য ও পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়া দৌড়ি শুরু করেন। যখন নিরাশ হয়ে ফিরছিলেন তখন একটি আওয়াজ শুনতে পান। হযরত হাযেরা বলেন, কে আছ আমি তোমার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি, সম্ভব হলে তুমি আমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে একটু সাহায্য করো। হঠাৎ তিনি তাঁর শিশু পুত্র ইসমাইল (আ)-এর কাছে একজন লোক (ফেরেশতা) দেখতে পেলেন। সে (ফেরেশতা) তাঁর পায়ের গোড়ালী অথবা ডানা দ্বারা যমীনে আঘাত করলে অথবা হযরত ইসমাইল (আ)-এর কান্নাজনিত পায়ের গোড়ালীর ঘর্ষণে নীচ থেকে পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হতে লাগলো। এ সেই ফোয়ারা বা কূপ যা বর্তমানে যমযম নামে বিশ্ব মুসলিমের কাছে পরিচিত। যে সুপেয় পানীয় হিসেবে পান করে পরিতৃপ্ত হয় মুসলমাগণ। তাও কা’বাকে কেন্দ্র করে ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর উছিলায় আল্লাহ তায়ালার করুণায় সৃষ্টি হয়েছে।

হযরত হায়েরা তাঁর মশক পূর্ণ করে নিলেন আর নিজেও তৃপ্তির সাথে পানি পান করলেন। এতে তাঁর ক্ষুধা নিবারণ হলো ও তাঁর শিশু পুত্রের জন্যে প্রয়োজনীয় দুধেরও ব্যবস্থা হলো। হযরত হাযেরা সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ক্রমাগত ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করার কারণে সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা হজ্জ ও ওমরাহ পালনকারীদের জন্যে সাফা মারওয়া পাহাড়ে ৭ বার দৌড়াদৌড়ি করার বিধান জারি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘‘অবশ্যই ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড় দু’টো আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন সমূহের অন্যতম, অতএব, যদি তোমাদের মধ্যে কোন লোক হজ্জ বা ওমরাহ আদায় করার এরাদা করে তার জন্যে এই উভয় পাহাড়ের মাঝে ‘সাঈ’ করতে হবে। কেননা যদি কোন ব্যক্তি অন্তরে নিষ্ঠার সাথে কোন ভালো কাজ করে তাহলে তারা যেন জেনে রাখে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা কৃতজ্ঞতাপরায়ণ ও প্রভূত জ্ঞানের অধিকারী’’ (সূরা বাকারা-২/১৫৮)।

হযরত ইসমাইল (আঃ) এর যখন হাঁটা-চলা ও খেলাধুলা করার বয়স তখন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে স্বপ্নে আদেশ করা হলো, তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কুরবানী করো। ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ১০ টি উট কুরবানী করলেন। পুনরায় তিনি আবারো একই সপ্ন দেখলেন। অতপর ইব্রাহীম (আঃ) আবারো ১০০ টি উট কুরবানী করলেন। আবারো তিনি একই সপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছেতো এ মুহূর্তে আমার কলিজার টুকরা প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) ছাড়া আর তেমন কোন প্রিয় বস্তুু নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, অতঃপর আমি তাকে (হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে একজন ধৈর্য্যশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দান করলাম। সে যখন পিতার সাথে হাঁটা-চলার উপযোগী হলো, তিনি (ইব্রাহীম আ:) বললেন, হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে কুরবানী করছি। সুতরাং তোমার মতামত কি? সে (হযরত ইসমাইল আ:) বললেন, হে আমার পিতা! আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা পালন করুন। আপনি আমাকে আল্লাহর মেহেরবাণীতে ধৈর্য্যশীলদের একজন পাবেন। অতঃপর যখন তাঁরা দু’জন একমত হলো আর আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার সামনে আত্মসমর্পণ করলো এবং ইব্রাহীম (আঃ) ইসমাইল (আঃ) কে জবাই করার জন্যে কাত করে শুইয়ে দিলো; তখন আমি ইব্রাহীমকে ডাকদিয়ে বললাম, হে ইব্রাহীম তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে রূপ দিয়েছো। নিশ্চয়ই এটা ছিল ইব্রাহীম ও ইসমাইলের জন্যে একটা পরীক্ষা। অতঃপর আমি ইব্রাহীমকে দান করলাম একটি মহা কুরবানীর পশু। অনাগত মানুষের জন্যে এ (কুরবানীর) বিধান চালু রেখে, তাঁর স্মরণ আমি অব্যাহত রেখে দিলাম। শান্তি বর্ষিত হোক ইব্রাহীমের ওপর। আমি এভাবেই সৎপরায়ণ ব্যক্তিদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। ’’(সুরা আস সফফাত-১০১-১০৯)।

কুরবানীর তাৎপর্য ও গুরুত্ব :- হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কতিপয় সাহাবা রাসূল (সাঃ)কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কুরবানী কি? রাসূল (সাঃ) বললেন, কুরবানী মুসলিম মিল্লাতের বা জাতির পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর সুন্নাত। তারা আবারো প্রশ্ন করলেন, এর মধ্যে আমাদের জন্যে কি আছে ? রাসূল (সাঃ) বললেন, কুরবানীর পশুর প্রতিটা পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী আছে। তারা বললেন, ভেড়ারতো অসংখ্য পশম আছে। রাসূল (সাঃ) বললেন, ভেড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী দেয়া হবে, যদি তা খালেস নিয়তে কুরবানী করা হয়’ (ইবনে মাযাহ)। আবু দাউদ শরীফের এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মর্যাদার দিন হচ্ছে কুরবানীর দিন।

কুরবানীর শিক্ষা: কুরবানী কোন চাপ বা জবদস্তির বিষয় নয়। মানুষ সেচ্ছায় তার প্রতিপালকের সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় সবচাইতে প্রিয় বস্তুু ত্যাগ করার মানসিকতা সৃষ্টি করে। যেমন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) শুধু মাত্র স্বপ্নে দেখেছেন, তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাহে কুরবানী করো। আর অমনি তিনি তাঁর আদরের একমাত্র সন্তান হযরত ইসমাইল (আঃ)কে কুরবানীর জন্যে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। পৃথিবীতে মানুষের কাছে সবচাইতে আকর্ষণীয় বস্তুর মধ্যে অর্থ-সম্পদ বা টাকা-কড়ি আর সন্তান অন্যতম। মহান আল্লাহর প্রেমে ও তাঁর নির্দেশের প্রাধান্য দানকল্পে। এই অর্থ-সম্পদের মোহ ত্যাগের এ মানসিকতা সৃষ্টি করাই হচ্ছে কুরবানীর শিক্ষা। কুরবানী আমাদের ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি করে ও পরকালের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। রাসূল (সাঃ) নির্দেশ করেছেন, হে লোকসকল তোমরা ত্রুটিমুক্ত ও উত্তম প্রাণী কুরবানী করো, কারণ কুরবানীর এ পশুগুলো হবে তোমাদের জান্নাতে যাওয়ার বাহন'(বায়হকী)।

কুরবানী সচ্ছল সকল মুসলমানের ওপর ওয়াযিব। কুরবানীর গোস্তের ওপর আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর, গরীব-মিসকিনের ও মুসাফিরের হক আছে। খেয়াল রাখতে হবে সমাজের কোন একজন ব্যক্তিও যেন কুরবানীর গোস্ত থেকে বঞ্চিত না হয়। কিন্তু কুরবানীর চামড়া শুধু মাত্র যাকাতের হক দারদেরই প্রাপ্য। কুরবানীর ব্যাপারে দৃষ্ট আকর্ষণ :- আমাদের সমাজে উট, গরু, মহিষ এ ধরনের পশু ৭ ভাগে কুরবানী করা হয়। এক্ষেত্রে সমমনা ও সম-আর্থিক সঙ্গতি সম্পন্ন লোকদেরই একত্রে কুরবানী করা উচিত। অনেকেই আবার কুরবানীর পশুতে আকিকার জন্যে এক ভাগ বা দুই ভাগ রাখেন। এতে আকিকা সহীহ হবে না। আকিকার জন্যে ছেলে হলে দু’টি ভেড়া বা বকরী আর মেয়ে হলে একটি ভেড়া বা বকরী নির্ধারণ করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে কুরবানীর সাথে আকিকার কোন সম্পর্ক নেই। কুরবানী ঈদ-উল আজহার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও ধনীর জন্যে এটা আনন্দের আর গরীবের জন্যে স্বস্তির।

লেখক: গাজী মুহাম্মাদ শওকত আলী

 

পরামর্শ–১১

দু’টি ইটকে জোড়া লাগাতে তৃতীয় বস্তু
সিমেন্ট-বালির মিশ্রনের দরকার হয়!

দু’টি কাঠকে জোড়া লাগাতে তৃতীয় বস্তু
লোহা/আঠার প্রয়োজন দেখা দেয়!

দু’টি কাঁপড়ের টুকরোকে জোড়া লাগাতে
তৃতীয় বস্তু সুই-সুতার সেলাই করতে হয়!

ঠিক এভাবেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা
‘প্রত্যেক দুই খন্ডকে’ জোড়া লাগাতে তৃতীয় বস্তুর ব্যবস্থা রেখেছেন!
সুতরাং দু’টি দিল বা বহু দিলকে পরষ্পর জোড়া
লাগাতেও নিশ্চিত তিনি তৃতীয় আরেকটি বস্তু তৈরী/ব্যবস্থা করে থাকবেন এবং করে রেখেছেন!
আর ঐ তৃতীয় বস্তুটির নাম হলো- ‘ দ্বীনে ইসলাম’ !
অতএব, যেই পরিবারে/দেশে দ্বীনে ইসলামের প্র্যাক্টিস/অনুসরণ যতো বেশি থাকবে, নিশ্চিত ঐ পরিবারে/দেশে মানুষের পারষ্পরিক দিলের বন্ধন বা আত্মার সম্পর্ক ততো বেশি মজবুত ও দৃঢ় থাকবে ৷ ফলে, গোটা দুনিয়ায় শান্তির সু-বাতাস বইবে ৷
কাজেই, আসুন! যদি পরিবারে শান্তি চাই, তবে দ্বীনে ইসলামের প্র্যাক্টিস বাড়িয়ে দিই! যদি দেশে শান্তি চাই, তবুও সর্বত্র দ্বীনে ইসলামের প্র্যাক্টিস/অনুসরণ বাড়িয়ে দিই!

 

পরামর্শ–১০

বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়াতে যত্রতত্র
বিশ্বমুসলিম নির্যাতনের গা শিউরে উঠা
ভিডিও ক্লিপগুলো আমরা দেখতে পাই!
বিশ্বসন্ত্রাসীরা আমাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে ভিডিও ক্লিপগুলো আবার আমাদের ভাইদেরকেই দেখিয়ে কাটা ঘায়ে নতুন করে মরিচগুঁড়ো ছিটাচ্ছে– আমাদের হৃদয়টাকেও আহত করার জন্য! এতেই ওরা আনন্দিত, উল্লসিত!
হৃদয়টা যদি সত্যিই আহত হত, তবে আমাদের উপকারই হত! ভবিষ্যৎ গোছাতে পারতাম! কিন্তু, পাথরে হৃদয় আমাদের ব্যথিত হয় না, আহত হয় না! যেটা হয়, তা হলো- অ্যাকশনধর্মী, রক্তাক্ত সিনেমার অভিনয় মনে হয়! ধর্ষণের অভিনয় মনে হয়! ফলে, নির্যাতনের ভিডিওগুলো দেখলে অনেকেই মন্তব্য করে, এটা মনে হয় অভিনয়, পুরোপুরি সত্য নয়, অমুক মুভির কাটপিস, কম্পিউটারে এডিট করা ইত্যাদি! নাঊযুবিল্লাহ ৷
বলা যায়, শয়তানগুলো তাদের মিশনে বেশ সফল!
একদিকে তারা নানাভাবে এবং নানাআয়োজনে মুসলিমহৃদয়ে বিষবাষ্প ঢেলে দিয়ে আমাদের চিন্তা-চেতনাকে ভোঁতা করে দিচ্ছে, অন্যদিকে তারা আমাদের কতককে মেরে কতকের হৃদয়ে তীব্র যন্ত্রণার পাহাড় চাঁপিয়ে দিচ্ছে!

বিশ্বমুসলিমদের তাই আরো সতর্ক হওয়া চাই! দায়িত্ত্ববান হওয়া চাই! ভালো-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করে চলা চাই!

নাটক-সিনেমা, বিশ্বকাপ ফুটবল/ক্রিকেট খেলা ও চোখধাঁধাঁনো আয়োজনগলো উপভোগ করার আগে আরেকটু ভেবে-চিন্তে নেওয়ার উন্মুক্ত পরামর্শ রইলো সবার প্রতি!

 

পরামর্শ–০৯

রাগে-ক্রোধে ভরা বর্তমানের অধিকাংশ মানুষ!
রাগ-ক্রোধ তো প্রায় সবারই আছে, তবে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা বলা চলে বিরল! মনে পড়ে, রাগের মাথায় কত কিছুই না ভেঙেছি এই জীবনে! বলেছি আরো কত কী! আপনারও মনে পড়ার কথা! কিন্তু, সত্যি বলতে কী- ঐ নিয়ন্ত্রণহীন রাগ-ক্রোধ এই জীবনে কখনো-কোথাও কল্যাণের বার্তা বয়ে আনে নি আমার জন্য! হয়তো আপনার জন্যও আনে নি! আনার কথাও না!
দেখুন তো, রাগ করলে সাধারণতঃ আমরা কী কী করি? হয়তো কিছু ভেঙে ফেলি, নয়তো কিছু বাজে বকি, কিংবা অন্য কোন অঘটন ঘটাই! এগুলোর একটিও যে আমার জন্য কল্যাণকর নয়, তা আমাদের প্রায় সবার কাছেই পরিস্কার! কারণ, কিছু ভাঙলেও আমার ক্ষতি, বাজে বকলেও আমার নোংরামী, আর অন্য কোন অঘটন ঘটালেও আমার ফাইজলামী!
সুতরাং পরামর্শ হলো, আমরা যেন রাগের মাথায়ও নিজের উপর রাজত্ত্ব করি এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে না ফেলি! সাথে সাথে ইমাম গাজালী রহ. এর ” ক্রোধ দমন ” বইটিও পড়তে পারি! পোস্টটি পড়ার জন্য জাযাকাল্লাহ!

 

পরামর্শ–০৮

ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন সাইটে আমরা যারা কম-বেশি লেখা-লেখি করি, তাদের প্রতি–
অনেক সময়ই অনলাইনে কাছের ও পরিচিতজনদের করা এমন কিছু পোস্ট সামনে পড়ে, যা দেখে ও পড়ে রীতিমত বিস্মিত হই! হায়, ‘চক্ষু লজ্জা’ বলেও তো একটা কথা আছে নাকি! তাছাড়া, এটা তো সবারই জানা থাকার কথা যে, ফ্রেন্ড লিস্টে তার কে কে আছে! অন্যায় তো সবখানেই অন্যায়! আর তা যদি হয় নিজের কাছের ও সম্মানীতজনদের সামনে?! তাহলে? ..

” যা কিছুই লিখি না কেন, সাথে সাথে একটু
হলেও যেন খেয়াল রাখি- আমার এই লেখাটা কিন্তু অনেকের সামনেই পড়বে! কাজেই, অবিবেচকের ন্যয় এমন কিছু যেন না লিখি, যা আমাকে অনেকের সামনেই লজ্জায় ফেলতে পারে! ” জাযাকাল্লাহ ৷

 

পরামর্শ–০৭

অধীনস্তজনদের নিয়ে যাদের চলতে হয়,
ব্যবসা-বাণিজ্যে, অফিস-আদালতে কিংবা
অন্য কোন কর্মস্থলে, তাদের প্রতি পরামর্শ-
” অধীনস্তদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করুন!
তাদেরকে আদব শেখান এবং মাঝে মাঝেই
অফিসিয়াল কানুন সম্পর্কে অবহিত করুন!
কাছে টানুন ও ভালোবাসুন! কিন্তু, মাঝে মাঝে ‘কৌশলি ধমক’ও দিন, যাতে আপনাকে আবার পার্টনার ভাবার সুযোগও না পায়! সেটা হলেও বিপদ! যাইহোক, এই ধমক শত্রুতার নয়, এই ধমক কৌশলের!
মনে রাখতে হবে, ধমক কৌশলেরই হোক আর শাসনেরই হোক, হাসিমুখে শেষ ভালোবাসাটা কিন্তু আপনাকে দিতেই হবে! এটা না হলেও বিপদ! “

 

পরামর্শ–০৬

সম্পর্ক বড় দামি ও স্পর্শকাতর জিনিস ৷ খুব কঠিন শর্তে টিকিয়ে রাখতে হয় এই সম্পর্ক ৷
সম্পর্ক তো গড়া যায় যখন-তখন ৷ সামান্য
ভুলে কখনো কখনো তা আবার চুরমারও হয়ে যায়! তাই, সম্পর্ক যদি হয় সু-সম্পর্ক এবং তা স্থায়ী হোক এমন বাসনা থাকে মনে, তবে অনেক কিছুর সাথে যে বিষয়ের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখা চাই, তাহলো– ” বন্ধু যেন কিছুতেই বুঝতে না পারে, আপনি তাকে কম গুরুত্ত্ব দিচ্ছেন! ”
আজকাল এই ভুলটা আমরা প্রায়শঃই করে থাকি ৷ যা সাধারণতঃ বন্ধুদের ইগোতে/চিন্তার জগতে মারাত্মকভাবে আঘাত হানে! এটা কিছুতেই কাম্য নয় ৷ উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়– ” বন্ধুর সাথে আপনি কিছু সুন্দর মুহুর্ত কাটাচ্ছেন, গল্প করছেন .. এমন সময় হঠাৎ ক্রিং ক্রিং টেলিফোন বা মোবাইল বেঁজে উঠলো, ফোন তো উঠাতেই হবে, তবে বন্ধুর কাছ থেকে যদি নেওয়া যায় ইশারায় একটু সম্মতি, তবে মন্দ কী তাতে! তারপরে আবার, বন্ধুকে উপেক্ষা করে মোবাইলে দীর্ঘালাপ শুরু করা! এটা বড় ভুল ৷ প্রয়োজন তো অল্পতেও সাড়া যায়! বন্ধুর দেমাগে বিষয়টা কিন্তু স্বভাবতই হিট করার কথা! তাই বন্ধু যখন কাছে আছে, তো আমি যতক্ষণ তাকে সময় দেবো, ততক্ষণ ছোট দরকারে কাউকে ফোন দেবো না! ফোন এলে বা দিলেও প্রয়োজন সাড়ার মতো অল্প কথায় ফোন রাখবো! বন্ধুত্ত্ব হবে তখন আত্মার সাথে! স্থায়ী বন্ধুত্ত্ব!
পাশাপাশি আরেকটা কমন ভুল, যেটা আমরা করে থাকি, তাহলো- ” বন্ধু আমার সাক্ষাতে এলে এ কথা আমি তাকে বোঝাতে পারি না যে- বন্ধু, তোমার আগমনে আমি মনে-প্রাণে খুশী! ”
তাই, পরামর্শ হলো- বন্ধুকে যেন আমরা যথাযথ গুরুত্ত্ব দিই এবং তার আগমনে যে আমি মনে-প্রাণেই খুশী, তা তাকে বুঝতে সহযোগিতা করি ৷

 

পরামর্শ–০৫

নতুন বিয়ে যারা করছেন, তাদের প্রতি!
প্রায়শঃই দেখা যায়– আমরা প্রায় অধিকাংশরাই নববধু পেয়ে বিয়ে এবং বিয়ে পরবর্তী এক-দেড় মাস কিংবা তার চেয়েও বেশি সময় যাবৎকাল পরিচিতদের সাথে বিয়েপূর্ব সময়ের ন্যায় যোগাযোগ রক্ষা করে চলি না বা অপরিচিতের মতো হয়ে থাকি!
যারফলে, প্রায় সব সার্কেলেই কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা না দিলেও ‘মৌন হতাশা’ তো অবশ্যই দেখা দেয় ৷ ফলে, মনে হতেই পারে তাদের- ‘ পাল্টে গেছে জনাব! ‘ তাই পরামর্শ, জামাই বাবুরা বিষয়টা একটু ভেবে দেখতে পারেন!

 

পরামর্শ–০৪

আমাদের প্রায় সবারই কাছের এমন কিছু
বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজন থাকেন, যাদের
সাথে আমরা খুব ফ্রেন্ডলি মিশি এবং স্বহাস্য
সব ধরণের গল্পও করে থাকি ! যার ফলে
প্রায়শঃই দেখা যায়, আমরা ও তারা পরষ্পর
রসালো গল্প বা খুব সাধারণ কথোপকথনের
সময়েও এমন এমন শব্দ ও বাক্যের ব্যবহার
করে থাকি, যা অন্য দশ জনের সামনে বলতে
কিছুটা হলেও লজ্জা বা ইতস্তবোধ করি! অথচ
সম্পর্কের দোহাই দিয়ে সেই সকল শব্দ ও বাক্যই
আজ আমরা অবাধে এই অনলাইন মিডিয়া
এবং পাবলিক প্লেসেও ব্যবহার করছি প্রতিনিয়ত!
ফলে লজ্জিত হচ্ছি আমরা সবাই! কারণ,
বিভিন্ন ক্যাটাগরি বা শ্রেনী-পেশার মানুষ
নিয়েই আমাদের ব্যক্তি জীবন সাজানো থাকে!
পরামর্শ হলো,
আমরা যেন বিশেষ করে অনলাইন মিডিয়া
এবং পাবলিক প্লেসে অপর ভাই ও বন্ধুর
সম্মানের প্রতি যথেষ্ট খেয়াল রাখি ! কারো
সামনে কাউকেই যেন লজ্জিত হতে না হয়!

 

পরামর্শ–০৩

ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায়
মাঝে মাঝেই হয়তো দেখে থাকবো যে–
বিভিন্ন প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে বিভিন্ন
ইসলামি দল ও জাতির কর্ণধার মুহতারাম
আলেম-উলামাদের নিয়ে খুব জঘন্য এবং
অশালীন ভাষায় মন্তব্য করা হচ্ছে! আমি
নিজেও বহু দেখেছি! এমতাবস্থায় আমার
পরামর্শ হলো, ” ভিন্ন মত ও ভিন্ন পথেরও
যদি হয়, যৌক্তিক সমালোচনা এবং মার্জিত
ভাষায় যেন করি! অসুন্দর ও অবমাননাকর
শব্দ/বাক্যগুলো যেন আমরা পরিহার করি!
আর যেখানে আমার করা মন্তব্যকে অনর্থক/
বে-ফায়েদা মনে হবে, সেখানে যেন সবচেয়ে
নিরাপদ রাস্তা ‘চুপ থাকা’টাকেই বেছে নিই ! “

 

পরামর্শ–০২

হাফেজে কুরআন যারা খতমে তারাবীহ
পড়াচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা ৷

যথেষ্ট দুঃখজনক হলেও সত্য যে,
সারা বছর অন্য সবকিছু করার সময় পেলেও ‘আমরা অনেকেই’ কুরআনে হাকীম তিলাওয়াতের সুযোগ তেমন পাই না ! কেন পাই না? .. আল্লাহ মা’লূম ! ফলে কুরআন আমাদের দিলে ঘুমিয়ে থাকে ! জাগ্রত থাকে না ! কিন্তু, যবে থেকে রমযান শুরু হয়ে গেলো, সেই ঘুমন্ত কুরআনকে জাগাতে দিন-রাত এক করে তিলাওয়াতে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমরা! সওয়াবের আশায় নয়; তারাবীহ পড়াতে হবে যে ! আল্লাহ মাফ করুন ৷
যাইহোক, তারাবীহ তো পড়াতেই হবে! সেজন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমান তিলাওয়াতও করতে হবে!
কিন্তু, দিন-রাত এক করে না ঘুমিয়ে রমযানে যেন আর এতো মেহনত করতে না হয় বা মেহনত কম করলেই চলে, সেজন্য একটি পরামর্শ ! মানলে কাজে দিবে, নিশ্চিত ! ইনশা আল্লাহ ৷

→ প্রতিদিনের তারাবীহের জন্য যেই পরিমান
তিলাওয়াতের প্রস্তুতি আমরা নিয়ে থাকি ,
ঐ এক-দেড় পারা কুরআন আমরা যেন খুব
ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করে নিই! তারাবীহ পূর্ব
সময়ে কাউকে যেন শুনিয়ে নিই! তারাবীহের
পরে যেন কোথাও কোনো ভুল আছে কি না,
শুধরে নিই! সাহরী খেতে উঠবো যখন, তখন
যেন তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে পুনরায় তা মালিককে
শুনিয়ে দিই! এভাবে যেন প্রতিদিনের আমল
প্রতিদিন করে পুরো একটি মাস কাটিয়ে দিই!
বিশ্বাস করুন, আপনার এই এক মাসের আমল
আপনাকে কমপক্ষে আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত
এনার্জি যোগাবে! প্রতি বছরই যদি এই আমল
জারী রাখা যায়, তাহলে কুরআনের প্রতিটি সূরা ও
আয়াত আপনার সামনে হার হালতে আয়নার
ন্যায় ভাসছে মনে হবে, ইনশা আল্লাহ ৷

তাছাড়া, সারা বছর দৈনন্দিন তিলাওয়াতের
অভ্যাশ তো হাফেজদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ৷

 

পরামর্শ–০১

আলিম-উলামা ও ত্বলাবা যারা আছেন-
লেখা-পড়ায় কিংবা চেহারায় একটু কম
হলেও মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়েদেরকেই বিয়ে
করা উচিত ৷ একটু সময় বেশি লাগলেও!
বিপরীত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংসার
টিকে না অথবা সংসারে শান্তি আসে না ৷
পরিক্ষীত, ব্যতিক্রমের সংখ্যা খুবই নগন্য ৷

ভিন্ন পরিবেশের একটি মেয়ে হঠাৎ করেই
বদলে যেতে পারে না ৷ সম্ভব হয়ে উঠে না ৷
যে মেয়েটি আগে থেকেই পর্দা রক্ষা করে
চলা শিখেনি, নামাযের পাবন্দি করেনি এবং
গান-বাদ্য ও নাটক–সিনেমাকে হারাম বলে
জানে নি, সে কীভাবে কারো কথায় হঠাৎ
করেই বদলে যাবে ?! কীভাবে তা সম্ভব? ..
সে তো নিজেকে ‘বন্দী পাখি’ মনে করবে !
আর সবকিছুই তার কাছে নিশ্চিত বাড়াবাড়ি
মনে হবে ! অবশেষে দেখা যাবে, লাজ–শরম
ও মান-ইজ্জতের মাথা খেয়ে সংসার ভাঙছে!
কিছুই ভাববে না সে ! কিছুই মনে করবে না !

মান হারাবে আপনার এবং শুধুই আপনার ..

 

কবূলিয়াত বড় দামি জিনিস

ভাবনার বিষয় ৷ মনে করে দেখুন—
খুব কাছে থেকে দেখা অনেককেই
দেখে মনে হতো- ‘ঝরে যাবে হয় তো’!
কিন্তু, না! ঝরে যায় নি সে/তারা ৷ ..
তাদের অনেকেই আজ সমাজ, দেশ ও
জাতির স্বার্থে বড় বড় কাজ করছে!
” আল্লাহ তাদের কাজে লাগিয়েছেন ! ”
আজ তারা সফল ব্যক্তিত্ত্ব প্রমাণে বেশ
এগিয়ে ৷ সে জন্যই তো, কবূলিয়াত বড়
দামি জিনিস ! কিছুই বোঝার উপায় নেই ৷

 

চলে গেলেন ড. আফিয়া সিদ্দীকা

মরে গিয়ে বরং বেঁচেই গেলেন কোরআনের হাফেজা আফিয়া সিদ্দিকা । বিশ্বের একমাত্র নিউরো সাইন্টিস্ট ড. আফিয়া সিদ্দিকা অবশেষে মুক্তি পেলেন নারকীয় যন্ত্রনা থেকে। নিস্তার পেলেন মার্কিনী ধর্ষকদের খেলা ও বিশ্ব দর্শকদের হেলা থেকে। বেঁচে গেল পিচ্চি মেয়ে মালালাও।

আশ্চর্য এক ম্যাসেজ মিলছে এ দু’জন থেকে। দু’জনই পাকিস্তানি। মালালা স্কুল পড়ুয়া এক কিশোরী আর আফিয়া হলেন পি.এইচ.ডি হোল্ডার। একজনকে ওরা খুবলে খায় আর অন্যজনকে নিয়ে মেতে ওঠে পরিকল্পিত খেলায় !
.
ড. আফিয়াকে আল-কায়েদার সাথে জড়িত সাজিয়ে ইউএস আদালত সাজা দেয়। সাথে দেয় গণ ধর্ষণের অলিখিত লাইসেন্স। আর মালালাকে কোলে তুলে গেয়ে উঠে মানবতার গান ! বিশ্ববিবেক গা ভাসায় স্রোতের অনুকূলে আর মানবতার ধ্বজাধারীরা বসে থাকে মুখে কুলুপ এটে।

আন্তর্জাতিক মিডিয়ার চোখ এড়িয়ে যায় এ দিকটা। আরব্য মুসলিম শাসকগণ তো আগ থেকেই হাতে চুড়ি আর পায়ে দাসত্বের বেড়ি পরা। দেখতে থাকে, বুঝতে থাকে আর গাইতে থাকে মনে মনে, তুমি চোর হইয়া চুরি করো আর পুলিশ হইয়া ধরো, সর্প হইয়া দংশন করো ওঝা হইয়া ঝারো!
.
দুইঃ
.
২০০৩ সালে প্রথমে কিডন্যাপ করা হয় ড. আফিয়াকে। এ কিডন্যাপিংয়ে সহায়তা করে খোদ পাকিস্তান সরকার। গুম করে রাখা হয় ২০০৮ পর্যন্ত। নিয়ে যাওয়া হয় আমেরিকান টর্চার সেলে। চলতে থাকে দিনের পর দিন গণ ধর্ষণ। তাকে উলঙ্গ করে কুরআন শরীফের পাতা ছিড়ে মেঝেতে বিছিয়ে রেখে বলা হত, যাও! কুরআনের উপর দিয়ে গিয়ে কাপড় নিয়ে এসো। ড. আফিয়া সেটি করতে পারতেন না। কারণ, তিনি মুসলমান।
.
কারণ তিনি কুরআনকে ভালবাসতেন। ৩০ পারা কুরআন তার বুকে ছিল। তিনি একজন হাফেজাও ছিলেন। ফলে তার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যেত।
.
২০০৮ সালে তাকে নিয়ে সাজানো হল মূল নাটক। এক মার্কিনী খ্রিষ্টান সেনা হত্যা চেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখানো হল। শুরু হয় বিচারিক প্রহসন।
.
আমেরিকান আদালত তাকে ৮৬ বছরের সাজা ঘোষণা করে! একজন নারী, একজন মুসলিম সাইন্টিস্ট কুরআনে হাফেজাকে নিয়ে বিশ্ব মোড়লরা মেতে উঠলো নোংরা খেলায়। ছয়’শ কোটি মানুষের এ পৃথিবীতে দেড়’শ কোটি মুসলমানের এ দুনিয়ায় কেউ কিছু বললো না!
.
আশ্চর্য এক পৃথিবীতে আমাদের আবাস ! ড. আফিয়ার বিরুদ্ধে প্রহসনের বিচারিক রায় ঘোষণার সময় তাকে কিছু বলতে বলা হলে বিচারকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন :

আপনি তাদের ক্ষমতা দিয়েছেন আমাকে রেফ করার, উলঙ্গ করে সার্চ করার! আপনার কাছে কিছুই বলবার নেই আমার। আমি আমার আল্লাহর কাছে যেয়েই যা বলার বলবো। আমি তো সেদিনই মরে গেছি, যেদিন আমাকে প্রথম ধর্ষণকরা হয়েছিলো। আমাকে ছেড়ে দিন। আমাকে আমার দেশে যেতে দিন।
.
সেই আফিয়া মারা গেলেন অবশেষে। আমি বলি মারা যাননি, আসলে তিনি বেঁচেই গেলেন।

২০০৩ থেকে মরে ছিলেন তিনি। মৃত্যুর মাধ্যমে বরং বেঁচে গেলেন তিনি। তাকে আর খুবলে খাবে না পিশাচের দল! তাকে আর বিবস্ত্র করে বলা হবে না, যাও কুরআনের উপর পা রেখে কাপড় নিয়ে এসো গিয়ে!

উফ! কী অসহ্য যন্ত্রনার-ই-না ছিলো নয়’টি বছর!

ড. আফিয়ার সাথে নোংরা খেলার এ নায়কদেরই যখন দেখি মালালাকে নিয়ে মাথা ঘামাতে, হা হুতাশ করতে, মানবতার পক্ষে বড় বড় বুলি আওড়াতে, তখন সন্দেহ করতে ইচ্ছে করে মালালা তাদের নিজেদেরই প্রডাকশন কি না! অথবা উদ্দেশ্য হাসিল করবার জন্যে তারা নিজেরাই তালেবান সেজে মেয়েটিকে গুলি করেছে কি না!
.
তিনঃ

বিশ্বের একমাত্র স্নায়ূ বিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকা’র মূল অপরাধ ছিল তিনি এতো উচ্চ শিক্ষিত হয়েও কুরআনের প্রতি ঝুকে ছিলেন কেনো? কুরআন থেকে কেন রেফারেন্স টানতেন?

১৯৯৩ সালের একটি ভিডিও ক্লিপের সৌজন্যে আমার সুযোগ হয় একুশশতকের এ হযরত সুমাইয়ার বক্তব্য শোনার। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম আমার বোনের কথাগুলো। কুরআনের একটি একটি আয়াত তেলাওয়াত করে বৈজ্ঞানিক সূত্রে কথা বলছিলেন তিনি। তিনি বলছিলেন, ইসলাম হলো নারীর সুরক্ষক। ড. আফিয়া সিদ্দিকার বক্তব্যের অংশ ইউটউব থেকে দেখতে পারেন।

মানুষটিকে ওরা মেরে ফেলল তিলে তিলে। অকথ্য নির্যাতন করে। বিশ্ব মিডিয়া চেপে গেলো খবরটি সেই প্রথম থেকেই। ইন্টারনেটে প্রকাশিত এক চিঠিতে মুসলিম জাতিকে তিনি ঘুমন্ত মৃত জাতি বলে সম্ভোধন করে কিছু আক্ষেপের কথা বলেছিলেন।

বলে ছিলেন, আমি আর তোমাদের সাহায্যের আশা করি না। আমি তোমাদের বোন না। তোমরা কেউ মুহাম্মদ বিন কাসেম না। আমি আমার আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাই, আর কারো কাছেই না। আফিয়া মিথ্যে বলেননি মোটেও।
.
সেকুলার লিবারেল ছোট্ট একটি মেয়ে মালালাকে এ সময়ের সেরা বুদ্ধিজীবি বানিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হলো আর ওদিকে আফিয়ার উপর চলতে থাকলো পৈশাচিক নির্যাতন। কেউ কিছু বললো না। কেউ বললো না ছোট্ট মেয়ে মালালাকে যে বা যারাই গুলি করেছে, অন্যায় করেছে, চরম অমানবিক কাজ করেছে। তালেবানরা এটা করে থাকলে তাদের অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। দোষীদের খোঁজে বের করে ফাসিতে ঝুলানো উচিত।

কিন্তু কথা তো এখানেই শেষ হতে পারে না। এক মালালাকে নিয়ে এতো দৌড় ঝাপ কিন্তু বিশ্বে যে আরো মালালা আছে। ইরাকে, আফগানে, ফিলিস্তিনে, পশ্চিমা ন্যাটো ঝুটের অবিরত ড্রোন হামলায় যে মালালারা মারা যাচ্ছে, তাদের কী হবে?
.
২০০১ থেকে এ পর্যন্ত শুধু আফগানিস্তানেই মারা হয়েছে ১৩ হাজার ২শ থেকে বেশি শিশু। যাদের বয়স ১৫ থেকে কম। অর্থাৎ যারা প্রত্যেকেই এক একজন মালালা। এদের বেলায় মানবতা নিরব কেনো? নাকি বিশ্ব সভ্যতার ঠিকাদার কর্তৃক অসভ্যতা চললে সেটাকে অসভ্যতা বলতে হয় না! কী জানি! তাদেরই তৈরি সাদ্দাম হোসেন যতদিন তাদের ফরমাবরদারী করেছিলেন, ঠিক ছিলেন। যখনই বেঁকে বসেছিলেন তিনি, ঝাপিয়ে পড়া হয়েছিলো ইরাকে। আর এই সময় এক লক্ষেরও বেশি ইরাকি শিশুকে হত্যা করলো ন্যাটো বাহিনী। কোথায় ছিলো তখন বড় বড় বুলি?

আমেরিকার পদলেহন করলে সাদ্দামই করেছিলো। রুখে দাড়ালে সাদ্দামই দাঁড়িয়েছিলো। এ শিশুরা তো কোনো পাপ করেনি। এ শিশুরা তো অস্ত্র ধরেনি। কেন তবে হত্যা করা হলো এদের?

মালালা আমার বোন। সে সুস্থ হোক। কিন্তু ইরাকের এ শিশুরা কি মালালা থেকে কম? তাহলে কেনো তাদের বেঁচে থাকার অধিকার থাকবে না? ডবল স্ট্যান্ডার্ড আর কতদিন চলবে?

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিকরাষ্ট্র মহাত্মা গান্ধীর ভারতে গেলো চল্লিশ বছরে সাত হাজারের বেশি কাশ্মিরী শিশুকে জীবন দিতে হয়েছে। এ শিশুরা, আফগান, ইরাক আর কাশ্মিরের। এই শিশুরা তো আর সন্ত্রাসবাদী ছিলো না। এরা কোথাও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয়নি। এরা জীবনে কাউকে একটা গুলিও করেনি। তাহলে এদের মেরে ফেলা হলা কেনো? এ শিশুদের অপরাধ কী ছিলো? বিশ্ব মানবতা এদের বেলায় নিরব কেনো?
.
একজন মালালাকে নিয়ে আধিখ্যেতার অন্ত নেই। বিশ্বের অত্যাধুনিক হাসপাতাল গুলোতে চলছে তার চিকিৎসা। অথচ, ইরাকে আফগানে ফিলিস্তিনে আহত মালালাদের দেখবার কেউ নেই!

মালালার পেছনে খরচ হচ্ছে লক্ষ লক্ষ ডলার আর এদিকে তাদেরই আঘাতে রাস্তায় পড়ে কাতরাতে থাকা শিশুরা পয়সার অভাবে ধুকছে মৃত্যু যন্ত্রনায়! কেনো? মানবতার নামে কেনো এ উপহাস?
.
চারঃ
.
মারা গেলেন ড. আফিয়া সিদ্দিকা। নয় নয়টি বছর লাগাতার ধর্ষণ আর নির্যাতনের সাথে সাথে তার শরীরে ক্যান্সারের বীজও পুতে দিয়ে ছিলো সভ্যতার মুখোশপরা মার্কিনী নরপশুরা। শারীরিক আর মানসিক যন্ত্রনার দু:সহ নারকীয় একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো।
.
বুকে কুরআন নিয়ে মাথা উচু করেই বিদায় নিলেন আফিয়া। চলে গেলো বোনটি আমার। আমরা তাকে বাঁচাতে পারলাম না। তার চে’ দু:খজনক হল বাঁচানোর চেষ্টাটা পর্যন্ত করলাম না।
.
কেউ বললাম না ড. আফিয়া যদি অপরাধ কিছু করেই থাকেন, নিরপেক্ষ আদালতে তাঁর বিচার হতে পারে (যদিও জানি না সেটি কোন গ্রহে আছে)। কিন্তু বিশ্বের একমাত্র নিউরো সাইন্টিস ও কোরআনের হাফিজা একটি মেয়েকে এভাবে বছরের পর বছর আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করা আর নির্যাতন করা তো কোনো সভ্য পৃথিবীতে চলতে পারে না! হায়রে সভ্যতা! হায়রে মানবতা!

আজকাল মানুষে আর পশুতে পার্থক্যটা এতো কমে এসেছে যে, ফারাক করতে কষ্ট হয়।.মালালা বেঁচে উঠছে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠুক। সে সেরে উঠেছে। বিশ্বের বড় মোড়লরা আছে তার সাথে।

আর ঐ যে ! ইরাকে আফগানে বা ফিলিস্তিনে, যারা ধুকছে, এরা হতভাগা! এদের জন্যে কাঁদবারও কেউ নেই। চিকিৎসা করাবারও কেউ নেই? নিয়তির মতিগতির দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাদের আর আর কিছু করার নেই!

অবাক পৃথিবীই আমাদের ঠিকানা! মালালা ইউসুফজাইকে ওরা কোলে তুলে নিয়েছে এ বলে যে, মালালা ছিলো নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে সোচ্চার কণ্ঠ। আফিয়াকে ওরা মেরে ফেলেছে তিলে তিলে। কারণ, আফিয়া ছিলেন উচ্চ শিক্ষিতা, নিউরো সাইন্টিস্ট।

তবু ওরা কী চায়, কীভাবে চায়, বিশ্ব বিবেক তবুও বুঝে না। নাকি বুঝেও বুঝে না! তবে একটি ব্যাপার বুঝতে পারছি। আমাকে অনেকগুলো চুড়ি কিনতে হবে বিশ্বের দেড়’শ কোটি মুসলমান নেতৃবৃন্দকে পরিয়ে দেবার জন্য। এ ছাড়া আমার আর কী বা করার আছে!

কুরআনের অনুসারী হয়ে ছিলেন বলে মক্কার মুশরিকরা হযরত সুমাইয়াকে উত্তপ্ত বালুতে শুইয়ে রেখে অকথ্য নির্যাতন করতো। আগেই জানানো হয়েছে আফিয়া ইস্যূতে মিডিয়া নিরব! তাই তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারেও পরিষ্কার করে জানানো হচ্ছে না কোনো কিছূ।

ড. আফিয়ার মৃত্যু সংবাদটি সঠিক হলে আর তিনি মারা যেয়ে থাকলে ইতোমধ্যে নিশ্চই সুমাইয়ার হাত ধরে বসে আছেন। তাহলে ভাল আছেন তিনি। কিন্তু বিশ্ব মুসলিম ভালো থাকবে কেমন করে? আর ওপারে যেয়েই বা কী জবাব দেবে? আফিয়া তো চলে গেলেন! বিশ্ব বিবেকের গালে চপেটাঘাত করে।

একজন আফিয়া এভাবে নিষ্পেষিত হয়ে বিদায় নিলো আমাদের চোখের সামনে। কেউ কিছু বললো না! কেউ কিছু করলো না! বুঝতে পারছি না ধিক্কার আমি কাকে দেবো?

– আব্দুল্লাহ আল হাসান

 

বাল্য বিয়ে/বিবাহ

হায়, এদেশে ‘বাল্য বিয়ে’ নামক কথিত অপরাধের (!) জাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়ে আঠারো হয়নি বলে বাবা-মা আজ তাদের ষোল / সতেরো বছরের মেয়েকেও বিবাহ দিতে পারছেন না নির্বিঘ্নে ! বিয়ে বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে যাচ্ছে ‘বন্ধুবেশী’ সাংবাদিকসহ সরকারী ও বিভিন্ন এনজিও আমলারা ! ‘বাল্য বিয়ে’ নামক এই ভয়াবহ অপরাধের (!) কারণে মোটা অংকের জরিমানাও গুণতে হচ্ছে অসহায় বাবা-মা ও বর পক্ষকে! বন্ধুবেশী লোকগুলো ডাকাতের মতো কীভাবে লাঞ্ছিত করলো বর-কনে ও তাদের পরিবারকে! উনারা যে শোভাকাঙ্খী বন্ধু! খুব বেশি দুঃখ লাগে তখন, যখন দেখি- বাল্য বিয়ে নামক (বাস্তবে যা যথোপযুক্ত বিয়ে) বিষয়কে এই ৯২% মুসলমানের দেশে ‘অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করে দেখালেও, অপরাধ হিসেবে দেখানো হয়না ‘বাল্য প্রেম/সেক্স’ ও বাল্য পতিতাবৃত্তিকে! প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে নানাভাবে বরং এর উৎসাহ এমনকি প্রশিক্ষণও প্রদান করা হচ্ছে! যার অনেক ‘নিশ্চিত প্রমাণ’ দেওয়া যাবে ৷ একটি বৈধ/নৈতিক ও হালাল পদ্ধতিকে বাঁধাগ্রস্থ করে রেখে একটি অবৈধ/অনৈতিক ও হারাম পদ্ধতির দিকে আমাদের সন্তানদেরকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কু-পরিকল্পিতভাবেই! যা কোন অবস্থাতেই অন্ততঃ ৯২% মুসলমানের দেশে কাম্য নয় ৷

আমার মতে- নিজ কন্যার প্রতি একজন সত্যিকারের বাবা-মায়ের চেয়ে বেশি দয়াবান, বেশি কল্যাণকামী ও বেশি হিতাকাঙ্খী জগতে আর কেউ হতে পারে না, হওয়া সম্ভব নয় ৷ হলে, নিশ্চিত তার/তাদের মতলব খারাপ ৷ কাজেই, কন্যার স্নেহপরায়ণ বাবা-মা ই জানেন ও বুঝেন, কখন তাদের নয়ণের মণি কন্যাকে বিয়ে দিতে হবে এবং কত বছর বয়সী লোকের সাথে ! এখানে অন্য কারো জঘন্য হস্তক্ষেপ করা আদৌ উচিত নয় ৷

বিয়ে-শাদীর ক্ষেত্রে বঙ্গ আইনে ছেলেদের বয়স কিছুটা যৌক্তিক হলেও মেয়েদের বয়স ১৮ নির্ধারণ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক মনে করছি ৷ ১৮ না হয়ে ১৫-১৬ হলেও কিছুটা মানার মত যুক্তি রাখে ! আপনার মন চায় তো- ৫০ বছরের বুড়ী বানিয়ে আপনার মেয়েকে বিয়ে দিন না! কে না করেছে আপনাকে?! কিন্তু, আমরা মনে করি- সব মেয়ে নয়, অনেক মেয়ে ১৫ বছর বয়সেই বিয়ের উপযুক্ত হয়ে যায় এবং যেভাবেই হোক (মিডিয়া, সিনেমা, নাটক, বাজে সংস্রব) প্রয়োজনীয় সবকিছু এর মধ্যেই তারা শিখে ফেলে ৷ ব্যতিক্রম মনে হলে বাবা-মা ই সিদ্ধান্ত নিবেন যে, কখন তাদের কন্যাকে তারা বিয়ে দিবেন ৷ যুগের অধঃপতন ও নিরাপত্তার বিষয়গুলোও তারা মাথায় রাখেন ৷ বিষয়টা দায়িত্ত্বশীলদের ‘ইনসাফপূর্ণ’ নজরে আসলে ভালো হতো !

 

হযরত আলীর রা. নসীহত

রাতের আঁধারে এমন কোন
কাজ করো না , যার কারণে
দিনের আলোয় তোমাকে মুখ
লুকিয়ে থাকতে হয় ৷ দিনের
আলোতেও এমন কোন কাজ
করো না , যার কারণে ‘রাতের
ঘুম’ তোমার নষ্ট হয়ে যায় ৷

 

ডাঃ মরিস বুকাইলী কেন মুসলিম হলেন?

image

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, ফ্রাঁসোয়া
মিত্রা প্রেসিডেন্ট পদে থাকেন
১৯৮১-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত।
তিনি তার পদে থাকাকালীন
সময়ে আশির দশকের শেষের
দিকে ফিরাউনের মমিকে
আতিথেয়তার জন্য মিসরের
কাছে অনুরোধ জানালেন। ফ্রান্স
তাতে কিছু প্রত্নতাত্তিক গবেষণা
করতে চাইলো। মিসরের সরকার
তাতে রাজি হলো। কাজেই
কায়রো থেকে ফিরাউনের
যাত্রা হলো প্যারিসে! প্লেনের
সিড়ি থেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট,
তার মন্ত্রীবর্গ ও ফ্রান্সের সিনিয়র
অফিসারগণ লাইন দিয়ে দাড়ালেন
এবং মাথা নিচু করে ফিরাউনের
মমিকে স্বাগত জানালেন !!
ফিরাউনকে জাঁকালো প্যারেডের
মাধ্যমে রাজকীয়ভাবে বরণ করে
তার মমিকে ফ্রান্সের
প্রত্নতাত্তিক কেন্দ্রের একটা
বিশেষ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হলো,
যেখানে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় বড়
সার্জনরা আছেন এবং তারা
ফিরাউনের মমিকে অটপ্সি বা
ময়নাতদন্ত করে সেটা স্টাডি
করবেন ও এর গোপনীয়তা উদঘাটন
করবেন। মমির উপর গবেষণার জন্য
প্রধান সার্জন ছিলেন প্রফেসর ডাঃ
মরিস বুকাইলি। থেরাপিস্ট যারা
ছিলেন তারা মমিটাকে পুনর্গঠন
করতে চাচ্ছিলেন, আর ডা. মরিস
বুকাইলি দৃষ্টি দিচ্ছিলেন যে –
কীভাবে এই ফিরাউন মারা গেলো!
পরিশেষে, রাতের শেষের দিকে ফাইনাল
রেজাল্ট যেটা আসলো, তা হচ্ছেঃ-
” তার শরীরে লবণ অবশিষ্ট ছিলো৷ ”
এটা সবচে’ বড় প্রমাণ হয়ে দেখা দেয় যে-
সে (ফিরাউন) নিশ্চিত ডুবে মারা
গিয়েছিলো এবং তার শরীরটা ডুবার
পরপরই সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র [নীল নদ ]
থেকে উপরে তুলে আনা হয়েছিলো,
তারপর লাশটা সংরক্ষণ করার জন্য
দ্রুত মমি করা হয়েছিলো !!
কিন্তু ….
এখানে একটা ঘটনা প্রফেসর ডাঃ
মরিসকে বুকাইলীকে হতবুদ্ধ করে দিল
যে, কীভাবে এই মমি অন্য মমিদের
তুলনায় বিলকুল অরক্ষিত অবস্থায়
থাকলো? অথচ এটা সমুদ্র থেকে
তোলা হয়েছে !? কারণ, কোন বস্তু যদি
আদ্র অবস্থায় থাকে, ব্যাকটেরিয়া ঐ বস্তুকে
দ্রুত ধ্বংস করে দেওয়ার কথা ..
কারণ; আদ্র পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া খুব
দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে থাকে !

ডা. মরিস বুকাইলী ফাইনাল রিপোর্ট
তৈরি করলেন, যাতে তিনি বললেন:-
এটা একটা নতুন আবিস্কার ! সেই
সময় তাকে একজন তার কানের কাছে
ফিসফিসিয়ে বললো: ‘ মুসলিমদের এই
ডুবে যাওয়া মমি সম্পর্কে ঝট করে
আবার বলতে যেও না যেনো ! ‘
কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে এর সমালোচনা
করলেন এবং এটা আজব ভাবলেন যে,
এরকম একটা বিশাল আবিস্কার, যেটা
আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য
সহায়তা করবে.. সেটা জানানো যাবে
না কেনো ?! কেউ একজন এসে তাকে
বললো:- কুরআনে ফিরাউনের ডুবা ও
তার লাশ সংরক্ষণের ব্যাপারে বলা আছে।
এই ঘটনা শুনে ডা. মরিস বুকাইলি
বিস্মিত হয়ে গেলেন এবং প্রশ্ন
করতে লাগলেন, এটা কীভাবে সম্ভব??!
এই মমি পাওয়া গেলো ১৮৮১ সালে,
আর কুরআন নাজিল হয়েছে আজ থেকে
১৪০০ বছর আগে !! সেকালের আরবেরা
প্রাচীন মিসরীয়দের মমি করার পদ্ধতি তো
জানতোই না, মাত্র কয়েক দশক আগে
আমরা জানলাম !!
ডা. মরিস বুকাইলি সেই রাতে ফিরাউনের লাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে রইলেন, আর গভীরভাবে
ভাবছিলেন- যেটা তার কলিগ তার কানে ফিশফিশিয়ে
বলে গেলো যে- মুসলিমদের কুরআনে ফিরাউনের
লাশের সংরক্ষণের কথা বলা আছে !!
বাইবেলে ফিরাউন কর্তৃক মুসা পিছু নেয়ার কথা বলা
আছে … কিন্তু, ফিরাউনের লাশের কী হলো,
সেটা সম্পর্কে কিছুই বলা নেই।
তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করছিলেন
এটা কি সম্ভব যে- এই মমি যার,
সেই (ফিরাউন)-ই মুসার (আ) পিছু
নিয়েছিল? এটা কি ধারণা করা যায়
যে মুহাম্মদ (স) ১৪০০ বছর আগেই
এটা সম্পর্কে জানতেন?? …

ডা. মরিস বুকাইলি সেই রাতে ঘুমাতে পারলেন না,
তিনি তাওরাত আনালেন এবং সেটা পড়লেন।
তাওরাতে বলা আছে-
” পানি আসলো এবং ফিরাউনের সৈন্য এবং তাদের
যানবাহনগুলোকে ঢেকে দিল, যারা সমুদ্রে ঢুকল তাদের
কেউই বাঁচতে পারল না। ” ডা. মরিস বুকাইলি হতবুদ্ধ
হয়ে গেলেন যে, বাইবেলেও লাশের সংরক্ষণের ব্যাপারে
কিছুই বলা নেই?! তিনি তার লাগেজ বাধলেন এবং সিদ্ধান্ত
নিলেন যে তিনি মুসলিম দেশে যাবেন এবং সেখানে পৌছে
প্রখ্যাত মুসলিম ডাক্তারদের সাক্ষাৎকার নিবেন, যারা
অটোপ্সি বিশেষজ্ঞ। তিনি সেখানে পৌছানোর পর
ফিরাউনের লাশ ডুবার পরে সংরক্ষণের আবিষ্কার
তিনি যেটা পেয়েছেন সেটা নিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে সব বললেন।
এ কথা শুনে একজন বিশেষজ্ঞ (মুসলিম) পবিত্র
কুরআন খুললেন এবং আয়াতটা ডা. মরিস বুকাইলীকে পড়ে শুনালেন, যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ
সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা বলেনঃ-

“ অতএব আজ বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি
তোমার দেহকে, যাতে তা তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহুলোক আমার
মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না। ”
-[ সুরাঃ ইউনূস, আয়াতঃ ৯২ ]

তিনি এই আয়াতের দ্বারা খুবই প্রভাবিত হয়ে
পড়লেন এবং তিনি তার জোর
গলায় চিৎকার দিয়ে বললেন:- আমি
ইসলামে প্রবেশ করেছি, এবং আমি এই
কুরআনে বিশ্বাসী। [সুবহানাল্লাহ]

ডা. মরিস বুকাইলি ফ্রান্স ফিরে গেলেন
এক ভিন্ন অবস্থায়। ফ্রান্সে ১০ বছর তিনি
আর কোন ডাক্তারি প্র্যাকটিস্ করেন নি,
বরং এই সময়েই- (টানা ১০ বছর ধরে)
তিনি সহীহ আরবী ভাষা শিখেছেন।

তিনি পবিত্র কুরআনে কোন বৈজ্ঞানিক
দ্বিমত আছে কিনা সেটা খুজেছেন;
তারপর তিনি পবিত্র কুরআনের একটি
আয়াতের অর্থ বুঝলেন, যেটাতে বলা আছেঃ-

” এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের
দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক
থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত
আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। ”
[সুরাঃ হা-মীম সাজদাহ, আয়াতঃ ৪২]

খুব সম্ভব ১৯৮৬ সালে ডা. মরিস
বুকাইলি একটা বই লেখেন, যেটা
পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের টনক নাড়িয়ে দেয়।
যেটা বেস্ট সেলার হয়। বইটি প্রায় ৫০
টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে!!
বইটির নামঃ-
“ বাইবেল, কুরআন এবং বিজ্ঞান ”

তিনি থিওরি অফ এভুলুশনকে চ্যালেঞ্জ
করে একটি বই লেখেন, যার নাম দেন-
What is the Origin of Man?

– ইব্রাহীম খলীল কাসেমী